সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৬ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
বন্ধীত্বে কাশ্মীর: ভারতের সি বি আই নেত্রী কবিতা কৃষ্ণার সরজমিনে প্রতিবেদন

বন্ধীত্বে কাশ্মীর: ভারতের সি বি আই নেত্রী কবিতা কৃষ্ণার সরজমিনে প্রতিবেদন

amarsurma.com

আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:

সি বি আই’ এম এল- এর নেত্রী কবিতা কৃষ্ণা ঈদুল আজহা ২০১৯ উপলক্ষে কাশ্মীর গিয়েছিলেন সেখানের জনগণের ঈদের সুখ-দুঃখ পর্যবেক্ষণ করতে। তিনি কাশ্মীরে বিভিন্ন শ্রেণীর নারী-পুরুষের সাথে কথা বলেন এবং বিভিন্ন চিত্র এবং ভিডিও ফুটেজ ধারণ করেন। তাঁর খুব ইচ্ছে ছিলো এই চিত্রগুলো দিল্লির প্রেসক্লাবে প্রদর্শনী করে কেন্দ্রের সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজকে জানাবেন প্রকৃত অর্থে কাশ্মীরের জনগণ কেমন আছে এবং তারা সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের ব্যাপারে কি ভাবছে। কিন্তু প্রেসক্লাব অফ ইন্ডিয়া তাকে সেই অনুমতি দিলো না। অতঃপর তিনি বিভিন্ন মিডয়ার সামনে নিজের অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেন। ভারতের নিউজ মেক্স তাঁর একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তাঁকে মেক্স-এর সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনি তো ঈদকে সামনে নিয়ে কাশ্মীরের পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলেন, কি অবস্থা দেখলেন সেখানে? তিনি বলেন, অবস্থা খুবই খারাপ, যার কোন উপমা হয় না। সেখানে মানুষ পূর্ণাঙ্গরূপে বন্ধি। সমস্ত কাশ্মীরকে বলা যেতে পারে একটি জেলখানা। তাই আমরা আমাদের প্রতিবেদনের নাম দিয়েছি ‘বন্ধীত্বে কাশ্মীর’। সেখানে ঈদের সময়ও সমস্ত দোকান-পাট বন্ধ ছিলো। ঈদের কোন খুশি নেই। সবাই বলছে, এমন ঈদ তো আমরা জীবনে কোনদি দেখিনি। বাচ্চারা বলছে, কোথায় গেলো আমাদের ঈদ? মেয়েরা বলছে, আমরা ঘরে ঈদ কীভাবে পালন করবো যেখানে আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং আজও নেয়া হচ্ছে। বিনা মামলায় ছেলে-মেয়েদেরকে কয়েদখানায় কিংবা পুলিশ ফাঁড়িতে রাখা হচ্ছে। কেউ কেউ যখন গায়েব হয়ে যায় তখন খুঁজতে গেলে পুলিশ বলে ওকে তো গ্রেফতারই করা হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কাশ্মীর বন্ধী বা জেলখানায় রূপান্তরিত হয়ে আছে। কারো কথা বলার অধিকার নেই। কারো শহর থেকে গ্রামে কিংবা গ্রাম থেকে শহরে স্বাধীনভাবে যাওয়া-আসার অধিকার নেই। গ্রামগুলোতে পর্যন্ত ঈদের দিনে কেউ মসজিদ কিংবা ঈদগাহে যেতে পারেনি। তাদেরকে ঈদের জামায়াত পড়তে দেয়া হয়নি। সবাই ঘরে ঈদের নামাজ পড়েছে।
বাচ্চারা আমাকে প্রশ্ন করেছে, কোথায় আমাদের ঈদের খুশি? কোথায় আমাদের কোরবানি? কারণ তাদের মা-বাবা এ বছর অর্থের অভাবে কোরবানি দিতে পারেনি। ঈদের দিনে কাশ্মীরের কোথাও আনন্দের প্রকাশ দেখা যায়নি। কাশ্মীরে আজ মেয়েরাও নিরাপদ নয়। এখানে একদিকে ছেলেদেরকে হত্যা করার ফলে মেয়েরা বিয়ের জন্য স্বামী সংকটে রয়েছে। সরকার এই সুযোগে প্রথমে বিহার থেকে স্বামী ভিক্ষা করে এনে কাশ্মীরী মেয়েদেরকে দিচ্ছে। নেতারা-শাসকেরা বলছেন বিহারের ছেলেরা সুন্দর, স্মাট এবং কাশ্মীরের মেয়েদেরকে স্বাধীনতা দানে তা করা হচ্ছে। এগুলো অনেকটা মেয়েদের অমতে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে করা হচ্ছে। কাশ্মীরী মেয়েরা যেন আমদানী-রপ্তানীযোগ্য মাল, যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে তা খরিদ-বিক্রি করা হচ্ছে। ভারতীয় কর্তাদের ভাষা শোনলে মনে হয় এগুলো লুঠেরাদের ভাষা। এই ভাষা থেকে স্পষ্ট হয় ভারতীয় নেতাদের মনে কাশ্মীরের জনগণ সম্পর্কে কি ধারণা।
কাটা গায়ে লবণ লাগানোর মতো কথা, কাশ্মীরের মিডিয়াগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, কাশ্মীরের সাংবাদিকরা পরস্পরের মধ্যে আলোচনাও করতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, অন্য কারো সাথেও তাদের কথা বলা নিষেধ। অন্যদিকে জাতীয় প্রচার মাধ্যমে দেখানো হচ্ছে কাশ্মীরে সবকিছু শান্তিতে চলছে, সবকিছু ভালো আছে, ওল ইজ ওয়েল (সবকিছু ভালো আছে)। আর স্থানীয়রা বলছেন, ওল ইজ হেল (সবকিছু জাহান্নাম) হলে আছে। এখানে তো বাস্তবেই সবকিছু জাহান্নাম করে রাখা হয়েছে। তাদের কথা হলো, আমাদেরকে আপনারা কথা বলার স্থানটুকুও দিচ্ছেন না। আমাকে এক মেয়ে বলেছে, আমাদের বিয়ে হচ্ছে, আর উৎসব করছে তারা। কমপক্ষে আমাদেরকে জিজ্ঞাসও করা হচ্ছে না এই উৎসব আমরা চাচ্ছি কি না? এই উৎসবে আমরা আনন্দিত হচ্ছি কি না? আমাদেরকে না জিজ্ঞাস করেই আমাদের বিয়ের উৎসব তারা করে নিচ্ছেন। আমাদের মতের বিরুদ্ধে আমাদের চোখ, হাত বেঁধে শক্তি প্রয়োগ করে তারা আমাদেরকে আমাদের বিয়ের মিষ্টি খাবিয়ে দিচ্ছে, এই মিষ্টি আমরা কীভাবে খাই?
মেক্স প্রতিনিধি কবিতা কৃষ্ণাজীর কাছে জানতে চাইলেন; কোন কোন ভারতীয় নেতা হরিয়ানার ছেলেদের সাথে কাশ্মীরী মেয়েদেরকে শক্তি প্রয়োগ করে বিয়ে দিতে গিয়ে বলছেন; কাশ্মীরী মেয়েরা হরিয়ানার ছেলেদেরকে পছন্দ করছে। এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
কবিতা কৃষ্ণাজীর উত্তর : এটা খুবই আশ্চর্যজনক এবং লজ্জাস্কর কথা। আপনি চিন্তা করুন এবং জানতে চেষ্টা করুন কাশ্মীরের মেয়েরা কি বলছে এই ব্যাপারে। তাদের বক্তব্য হলো, এই সরকার কাশ্মীরী মেয়েদেরকে মুক্ত করার কথা বলে হরিয়ানা এবং বিহারীদের সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই যুদ্ধ হয়, পুরুষ সংকট হয়। কাশ্মীর পুরুষদেরকে হত্যা করে মেয়েদের জন্য স্বামী প্রথমে বিহার থেকে নিয়ে আসা হয়, এখন নিয়ে আসা হচ্ছে হরিয়ানা থেকে। আমরা টমাটু এবং আপেলের মতো খরিদ-বিক্রির বস্তু নাকি? স্মরণ রাখতে হবে কাশ্মীরী মেয়েরা ফল বা অন্য বস্তু নয় যে আমাদেরকে যেখানে ইচ্ছে সেখানে বিক্রি করা হবে। আমাদেরকে কেউ বিয়ে করতে চাইলে কমপক্ষে আমাদেরকে জিজ্ঞাস করুক। এই হলো কাশ্মীরী নারীদের বক্তব্য। ভারত সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করলো, কাশ্মীরী জনগণকে জিজ্ঞাসও করলো না, এখন কাশ্মীরী মেয়েদেরকে উঠিয়ে অন্য স্থানে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে। এসব লুঠেরাদের কাজ। কাশ্মীরী মেয়েরা এই সব কাজের পূর্ণাঙ্গ বিরোধী।
মেক্স প্রতিনিধি : কবিতাজী, আপনি কাশ্মীর থেকে উঠানো ছবি ও ভিডিও প্রদর্শনী করতে চেয়েছিলেন দিল্লিতে প্রেসক্লাব অফ ইন্ডিয়ায়, কিন্তু তারা আপনাকে তা দেখাতে দেয়নি। তারা আপনাকে কি বলে নিষেধ করেছে?
কবিতা : প্রেসক্লাব আমাকে বলেছে, দেখুন আপনারা ভিডিও কিংবা প্রজেক্টার এখানে চালাতে পারবেন না। কারণ. আপনাদের অনুমতি নেই। পরে তারা আমাকে গোপনে বললো, মিডিয়া প্রশ্ন করছে আমরা আপনাকে কেন তা প্রদর্শনী করতে নিষেধ করেছি? আপনাকে জিজ্ঞাস করলে বলবেন, নিষেধ করা হয়নি, আমরা অন্য সমস্যার কারণে তা প্রদর্শিত করিনি। তারা বললেন, তাদের উপর অনেক ছাপ আছে, আমরা যেন তা বুঝতে চেষ্টা করি। আমি বললাম. ছাপ বা অসুবিধা তো শুধু আপনাদের উপর একা নয়। ছাপ তো আমাদের উপরও আছে। আমরাও তো অসুবিধায় আছি। আমরা এই ছাপ এবং অসুবিধার কথা জেনেও ভিডিও করেছি এবং প্রচার কব-ই। এই ভিডিও প্রচারের পর আমাদেরকে কি করা হবে তাও আমরা জানি, তবু আমরা দেশের নাগরিক হিসাবে তা রেকর্ড করেছি এবং প্রচার করবোই। আমরা ছোট একটি সংগঠন, তবু আমরা এই দায়িত্ব নিজের মাথায় নিয়েছি, প্রেসক্লাব অফ ইন্ডিয়া এত বড় সংগঠন হয়েও সেই দায়িত্ব নিচ্ছে না কেন? পিছনের হাড্ডি বলে একটি জিনিষ রয়েছে, সেইু হাড্ডি থাকতে হয় সোজা হয়ে দাঁড়ানোর জন্য।
মেক্স প্রতিনিধি : যারা বলছেন কাশ্মীরের অবস্থা ভালো, পরিস্থিতি শান্ত, আপনি কাশ্মীর থেকে ফিরে তাদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?
কবিতা : সবাই ওদের সম্পর্কে বলছে বদবু (র্দুগন্ধ) থেকে শান্তির কথা বের হচ্ছে। কাশ্মীরে কবরস্থানের শান্তি রয়েছে। সবার চোখ-মুখ বেঁধে বলা হয় দেখো কি শান্তি, তা কী রকমের শান্তি? যদি শান্তি থাকে তবে কেন তাদের টেলিফোন, মোবাইল, ইন্টারন্যাট খুলে দিচ্ছে না? সেখানের লোকেরা আজ হাতে পাথর উঠিয়ে নিয়েছে। আমি বলবো তাদের সামনে আর কোন উপায় নেই। আজ যদি তাদেরকে মিছিল, মিটিং, শ্লোগানের সুযোগ দেয়া হতো তবে এমন হতো না। এখন তাদের সামনে আর কোন উপায় নেই হাতে পাথর উঠানো ছাড়া। ভারতের জনগণ যদি মনে করেন গণতন্ত্র শুধু কাশ্মীরে ধ্বংস হচ্ছে, আমাদের এখানে হচ্ছে না, আমরা সহীহ-সালামত রয়েছি তবে আগামীতে যখন আমাদের এখানে এই পরিস্থিতি তৈরি হবে, আমাদের নারীদের স্বাধীনতা নস্ট হবে যা আমরা ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে অনেক সংগ্রামের বিনিময় অর্জন করেছিলাম তখন দুনিয়া এগিয়ে আসবে না বরং দূর থেকে শুধু বলবে-আহ ভারতে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। তখন করার কিছু থাকবে না। ইন্ধিরা গান্ধী যখন সংবিধানকে স্থগিত করে জরুরী অবস্থা জারি করেছিলেন তখনও তিনি বলেছিলেণ তা প্রয়োজনে করেছেন। কিন্তু জনগণ তা মেনে নেয়নি। জনগণ কি কাউকে কোনদিন তার স্বাধীনতা হরণের অধিকার দিয়ে থাকে?

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com